বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতি বছরের ন্যায় দেশের সর্ববৃহৎ জনসমাগমের মধ্যে দিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। রবিবার সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে বিজয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিমা বিসর্জন। কক্সবাজার জেলা ও আশে-পাশের এলাকার অর্ধ শতাধিক মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে এই স্থানে। যা ঘিরে পর্যটক ও পূজারি মিলে কমপক্ষে ৩ লাখের অধিক মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে সকল প্রকার প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছে প্রশাসন। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের এ সংক্রান্ত এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিধি, সনাতন ধর্মালম্বীদের নেতা সহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সভায় প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে চার স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, গোয়েন্দা সদস্য, সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতিনিধি সহ নানা পেশাজীবি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর ৯ ইসিবি কক্সবাজারের অধিনায়ক লে. কর্ণেল তানভীর আহমেদ, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, সিভিল সার্জন আসিফ আহমেদ হাওলাদার, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল মিঠু, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) দীপক শর্মা দিপু প্রমুখ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, সভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে সার্বিক প্রস্তুতি এবং উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে দুপুরের পর পরই বিভিন্ন মন্ডপ থেকে আনা হবে প্রতিমা। আড়াই টা থেকে শুরু হবে প্রতি বছরের ন্যায় বিজয়া সম্মেলন। বিকাল সাড়ে ৪ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সৈকতের সাগরে বিসর্জন হবে প্রতিমা সমুহ।
তিনি জানান, বিসর্জন ঘিরে চট্টগ্রাম থেকে নৌ বাহিনীর একটি ডুবরি দল সৈকতে দায়িত্ব পালন করবে। একই সঙ্গে লাইফ গার্ড কর্মীরা দায়িত্ব পালন করবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৪ স্তরের নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে। পূজারি, আগত দর্শনার্থী ও পর্যটক মিলে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হবে। এদের জন্য পৌরসভা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, পুলিশ, জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে থাকবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বিশেষ দল।
জেলা প্রশাসক বলেছেন, জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদ সভায় জানিয়েছে ৫০ এর অধিক মন্ডপের প্রতিমা আনা হবে এবার বিসর্জনে। এসব প্রতিমা আনার সময় স্থানীয় মন্ডপের স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা প্রদান করবে।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল মিঠু জানিয়েছেন, ১৫১টি প্রতিমা ও ১৭০ টি ঘট পূজা মিলিয়ে জেলায় ৩২১ টি মন্ডপে চলছে দুর্গাপূজা। দেশের সবচেয়ে বড় এই বিসর্জন অনুষ্ঠান হবে সৈকতে। এটা নিরাপদ ও নির্বিঘেœ করতে বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে। প্রশাসনের নিদের্শনা মতে প্রতিমা বহনকারি গাড়ি সারিবদ্ধভাবে আসবে এবং ফিরবে।
তিনি বলেন, বিকাল ৫ টার মধ্যেই শেষ হবে বিসর্জনের সকল আনুষ্ঠানিকতা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, শহরের বাইরের পূজামন্ডপগুলোর প্রতিমা কলাতলী মোড় হয়ে এবং শহরের অভ্যন্তরের প্রতিমাগুলো প্রধান সড়কের হলিডে মোড় হয়ে লাবণী পয়েন্টের বিসর্জন অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাবে। প্রতিমাগুলো স্ব স্ব মন্ডপ থেকে গাড়ী যোগে আনার সময় আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করবে। পাশাপাশি প্রতিমাগুলো আনার সময় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ লক্ষ্যে পুলিশের টহল দল নিয়োজিত থাকবে।
বিসর্জন অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তায় পু্লশি ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হার্ডলাইনে থাকবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। সৈকতের প্রবেশ মুখ, প্রতিমা বহণকারি সড়কে থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টহল, সাদা পোষাকে নজরধারি, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং পোষাকধারিদের মোড়ে মোড়ে অবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসক, সেনা বাহিনী, র্যাব, বিজিবিও দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে, সনাতন ধর্মালম্বীর সর্বৃহৎ দুর্গোৎসব ঘিরে টানা ৪ দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদাচরণে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বৃহস্পতিবার থেকে প্রকৃতি উপভোগের উদ্দেশ্যে আসা পর্যটকের ভরপুর এখন কক্সবাজার। কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য বলছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ২০ হাজারের অধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। সারা সৈকত সহ বিভিন্ন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজেদের মত।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply